November 28, 2025, 7:44 am

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিএনপি কর্মী কুদরত আলীকে গুলি করে হত্যার মামলায় অবশেষে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে। সোমবার (২৮ জুলাই) কড়া নিরাপত্তায় তাকে কারাগার থেকে এনে দৌলতপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানেই তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় বিএনপি কর্মী সুজন মালিথা হত্যাকাণ্ডে প্রধান আসামি হিসেবে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই থেকে তিনি কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে রয়েছেন।
তানভীর আরাফাত এর আগে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। কুষ্টিয়ায় কর্মরত থাকাকালে একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে এবং ভোগ করতে হয়েছে বিভাগীয় শাস্তিও।
কুদরত আলী হত্যা মামলা ও পটভূমি///////////
২০২৪ সালের ২ অক্টোবর নিহত কুদরত আলীর ছেলে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, কুদরত আলী বিএনপির একজন সক্রিয় ও জনপ্রিয় কর্মী ছিলেন। তার জনপ্রিয়তা ও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ আওয়ামী লীগ ও কিছু সুবিধাভোগী পুলিশের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
বাদী অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের ২৩ জুলাই গভীর রাতে দৌলতপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার, এসআই রোকনুজ্জামান, এসআই মেহেদী হাসান, এসআই শাহজাহান, এএসআই আনিচুর রহমান এবং কুষ্টিয়ার তৎকালীন এসপি এস এম তানভীর আরাফাতসহ আরও ১০-১২ জন পুলিশ তাদের মুন্সিগঞ্জের বাড়িতে এসে কুদরত আলীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরবর্তী দুই দিন ধরে কুদরত আলীর খোঁজ করতে গিয়ে পরিবার কোনো তথ্য পায়নি। ২৫ জুলাই ভোরে খবর আসে, কুদরত আলীকে গুম ও গুলি করে হত্যা করে থানায় রাখা হয়েছে। মরদেহ দেখতে গেলে দেখা যায়, তার বুক, হাত, পিঠ, মুখ ও পায়ে গুলির ও নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। পরে মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় এবং দাফন সম্পন্ন হয়।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, দাফনের পর থানায় মামলা করতে গেলে ওসি তদন্ত হুমকি দেন এবং বলেন, মামলা করলে তাকেও একই পরিণতির শিকার হতে হবে। সেই সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং তানভীর আরাফাত ‘কুষ্টিয়া কিলার তানভীর’ নামে পরিচিত ছিলেন বলে ভয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে বাদী সাহস করে মামলা দায়ের করেন।
দৌলতপুর থানার ওসি’র বক্তব্য/////
মামলার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, “এই মামলায় তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন এবং তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”
সুজন মালিথা হত্যা মামলা
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের বিএনপি কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগেও তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিহতের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
নিহত সুজন মালিথা ছিলেন ইসমাইল মালিথার ছেলে এবং কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুজন হোসেন